বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বিশ্ব নবীর আগমনে, সুরভিত পরিবেশে পুলকিত বিশ্ব আজীবন সম্মাননা পেলেন জনাব ওসমান গণি ও শফিকুর রহমান মধু মিয়া বৃষ্টির ধারায় মুছে যাক “রোজা রাখি, আল্লাহর হুকুম পালন করি, নিজে সুস্থ থাকি অপরকে সুস্থ থাকতে উৎসাহিত করি” মঙ্গলকাটা কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টার ‘MCTC’র এক যুগ পূর্তিতে আনন্দ ভ্রমণ ফেনিবিল ও কোনাপাড়া সমাজকল্যাণ যুব সংঘের অমর একুশে উদযাপন ‘আব্দুল গণি ফাউন্ডেশন’ মেধাবৃত্তি পরিক্ষা-২২ এর বৃত্তি প্রাপ্তদের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত নারায়ণতলা মিশন উচ্চ বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত সুনামগঞ্জের ডলুরা বর্ডারহাটে অনিয়ম ও মাদক বন্ধের দাবীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত তৃতীয় বারের মত অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো দাখিল ২০০৪ ব্যাচ এর মিলনমেলা

বছরজুড়ে আলোচিত ছিল যেসব ঘটনা

বছরজুড়ে আলোচিত ছিল যেসব ঘটনা

আদনান রহমান:

বিদায়ের পথে ২০১৮। এই বছরে ঘটেছে অনেক আলোচিত ঘটনা-দুর্ঘটনা। বছরজুড়ে আলোচিত ছিল খালেদা জিয়ার সাজা, কারাগার থেকে হাসপাতালে যাওয়া-না যাওয়ার খবর। নেপালে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা যেমন কাঁদিয়েছে, মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মতো সুসংবাদও শুনেছে দেশবাসী।

এ বছরই শিক্ষার্থীদের সর্ববৃহৎ দুইটি আন্দোলনের ঘটনা ঘটেছে। একটি কোটা সংস্কার নিয়ে আরেকটি নিরাপদ সড়কের দাবিতে। এই দুই আন্দোলনে সরকার কিছুটা চাপে পড়লেও ঠিকঠাকভাবেই পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে তারা।

এ ছাড়া এ বছর বড়পুকুরিয়া থেকে কয়লা ‘উধাও’ ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে স্বর্ণের ওজন কমার মতো অদ্ভুত ঘটনাও ঘটেছে। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বছরে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা-দুর্ঘটনাকে ছাপিয়ে ভোটের ঢামাঢোলে মেতেছে সারাদেশ।

বছরের সেসব উল্লেখযোগ্য ঘটনাগুলো তুলে ধরা হলো (তারিখ অনুসারে)

ডিআইজি মিজানের কীর্তিকলাপ :

তরুণীকে তুলে নিয়ে বিয়ে, গৃহবন্দি করে রাখা, এক সংবাদ উপস্থাপিকাকে তুলে নেয়া, হত্যার হুমকিসহ জানুয়ারির ৭ তারিখ একটি পত্রিকার শিরোনাম হন ডিআইজি মিজানুর রহমান। পরদিন ৮ জানুয়ারি ওই একই পত্রিকায় আরও একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনার ঝড় ওঠে। এরপর উপস্থাপিকা ও সাংবাদিককে হত্যার হুমকির মতো একের পর এক কীর্তিকলাপের খবরে বেরিয়ে আসে ডিআইজি মিজানের আসল রূপ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাকে প্রত্যাহার করা হয়। পরে মার্চ মাসে পুলিশের উচ্চপদে থেকে তদবির, নিয়োগ, বদলিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে নানা উপায়ে শত কোটি টাকার মালিক হন বলে দুদকে অভিযোগ আসে।

অভিযোগ তদন্তে দুদকে ডাকা হয় ডিআইজি মিজানকে। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর ছাড়া হয় তাকে। প্রমাণ মেলে তার কু-কর্মের। তার বিরুদ্ধে এখনও পুলিশের বিভাগীয় ও দুদকের তদন্ত চলছে। ২০১৮ সালের শুরুর দিকে দেশজুড়ে ডিআইজি মিজান আলোচনার শীর্ষে উঠে আসেন।

মুখে মুখে ‘আসামি’, ‘অসুস্থ’, ‘নির্বাচনের অযোগ্য’ খালেদা :

এতিমের টাকা নিজের জিম্মায় রখার দায়ে এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ৫ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। রায়ের প্রায় মাস খানেক আগ থেকেই খালেদাকে কারাগারে রাখা হবে না কি তাকে নিজ বাড়িতে রেখে সেটাকে কারাগার ঘোষণা করা হবে তা নিয়ে ছিল জল্পনা-কল্পনা। অবশেষে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি কক্ষে রাখা হয় তাকে। ‘অসুস্থ’ খালেদার সঙ্গে কারাগারে থাকতে আদালতের অনুমতি নেন তার গৃহকর্মী ফাতেমা বেগম (৩৫)।

‘খালেদা জিয়া কারাগারে গেলে দেশজুড়ে নাশকতা, পুলিশের ওপর হামলা হবে’, দেশের মানুষের এমন শঙ্কা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় ঢাকায় দুই-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া তেমন কিছুই হয়নি। খালেদা কারাগারে যাওয়ার পর থেকেই তাকে জামিনে মুক্ত করার চেষ্টা করছেন বিএনপির আইনজীবীরা। তবে কারাগারে যাওয়ার পর আরও তিন মামলায় খালেদাকে গ্রেফতার দেখানো হলে ঝুলে যায় তার জামিন প্রক্রিয়া। এরপর কারাগারে অসুস্থ হন খালেদা। কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) নেয়ার কথা বললেও জেদ ধরেন ইউনাইটেড হাসপাতালে যাওয়ার। তবে কারাবিধি ঠিক রাখতে বিএসএমএমইউতেই ভর্তি রাখা হয় তাকে।

মনোনয়নপত্র জমা দিয়েও নির্বাচনের অযোগ্য হওয়ায় বছরের শেষের দিকে আবারও আলোচনায় আসেন তিনি।

মশার জোরে বিমানবন্দরের ফ্লাইট আটকা :

চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১৫০ যাত্রীসহ মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্সের এমএইচ-১৯৭ ফ্লাইটটি আটকে ফেলে মশা। এদিন রাতে উড়োজাহাজটি ঢাকা ছাড়তে রানওয়ের দিকে এগোলেও ফিরে আসে মশার কারণে। যাত্রী ওঠার সময় মশাও ঢুকে পড়ে ফ্লাইটে। মশার উৎপাতে বসে থাকতে পারছিলেন না যাত্রীরা। দীর্ঘ চেষ্টার পর কেবিন ক্রুরা মশা নিধনে ব্যার্থ হলে ফ্লাটটির উড্ডয়ন সাময়িকভাবে থেমে যায়।

শাহজালালের রানওয়ে সংলগ্ন ঝোপঝাড়ে থাকা এসব মশার উৎপাতে ওই ঘটনার পর আরও কয়েকদিন রাতের ফ্লাইটগুলো ছাড়তে দেরি হয়। এরপর গোঁটা বিমানবন্দরে ওষুধ ছিটিয়ে ও ধুপ দিয়ে ‘মশা নিধন প্রকল্প’ হাতে নেয় কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরে মশার উৎপাত এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে বলে জানা গেছে।

ড. জাফর ইকবালকে হত্যাচেষ্টা :

৩ মার্চ সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসের মুক্তমঞ্চে এক অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে ফয়জুল হাসান নামে এক যুবক।

তাকে হত্যাচেষ্টায় ৩৫৩ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে পুলিশ। ৬০ জনের সাক্ষী নিয়ে মামলায় প্রধান আসামি ফয়জুল হাসানসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়।

southeast

হামলার উদ্দেশ্য জানতে চাইলে তদন্তে পুলিশ জানায়,‘ফয়জুল জাফর ইকবালকে নাস্তিক মনে করে নিজেই তাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে।’

হামলায় কয়েকদিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে জাফর ইকবাল ফিরে আসেন ভক্তদের মাঝে।

‘টু-জিরো’-‘জিরো-টু’ বিভ্রান্তিতে বিধ্বস্ত ইউএস বাংলার বিমান :

১২ মার্চ ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিএস-২১১ ফ্লাইটটি নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দিকে উড়ে যাচ্ছিল। স্থানীয় ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের আগে রানওয়ে ‘টু-জিরো’ না কি ‘জিরো-টু’ নির্ধারণে পাইলট ও এটিসি টাওয়ারের সঙ্গে বেশ কয়েকবার কথাবার্তা হয়। তবে একপর্যায়ে কোনো এক পক্ষের বিভ্রান্তিতে মাটিতে আঁচড়ে পড়ে বিধ্বস্ত হয় ইউএস বাংলার ফ্লাইটটি। ফ্লাইটটিতে ৬৭ যাত্রী ও ৪ জন ক্রু মোট ৭১জন ছিলেন যাদের ৫১ জনই নিহত হয়েছেন।

দুর্ঘটনার পরপরই নেপাল ইউএস-বাংলার পাইলটকে এবং ইউএস-বাংলা নেপালের এটিসি টাওয়ারের কর্মকর্তাদের ওপর দায় চাপানো শুরু করে। তবে দেশটির সিভিল এভিয়েশন তদন্ত করছে। ২০১৯ সালের মার্চের ১১ তারিখ অর্থাৎ ঠিক এক বছরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের কথা রয়েছে।

রক্তাক্ত ঢাবি :

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ৮ এপ্রিল সকাল থেকে শাহবাগের রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দিনভর অবস্থান করে সড়কেই রাত্রি যাপনের পরিকল্পনা করে তারা। তবে রাতে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ছবির হাটের সামনে টিয়ারসেল ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এতে করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে শিক্ষার্থীদের। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে ঢাবি এলাকাজুড়ে। ভাঙচুর করা হয় ঢাবি ভিসি মোহাম্মদ আখতারুজ্জামানের বাসভবনে, চলে লুটপাট। সেই রাতে আহত হয় প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।

southeast

পরদিন ৯ এপ্রিল দেশব্যাপী শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। একাত্মতা ঘোষণা করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়েদুল কাদেরের সঙ্গে আলোচনার পর আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় শিক্ষার্থীরা। তবে সেদিন সংসদে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিয়ে কটূক্তি করায় আবারও রাস্তায় নামে শিক্ষার্থীরা। তীব্রতর হয় আন্দোলন। এদিন বিকেলেই সংসদে ‘সব চাকরিতে প্রধানমন্ত্রীর কোটা তুলে নেয়ার’ ঘোষণায় থামে যায় আন্দোলন। পরে মন্ত্রী পরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রস্তাব অনুযায়ী প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

বাংলাদেশের স্বপ্ন- বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে :

১৩ মে মহাকাশে উড়েছে বাংলাদেশের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট। দুই দফা তারিখ পেছানোর পর এদিন দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে মহাকাশের পথে যাত্রা শুরু করে লাল সবুজের প্রথম স্যাটেলাইট। উৎক্ষেপণের ঐতিহাসিক মুহূর্তটি বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ দেশের সবকটি বেসরকারি টেলিভিশন সম্প্রচার করে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবার সম্প্রসারণ ও দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলা ও ব্যবস্থাপনায় নতুন মাত্রা যোগ করবে বঙ্গবন্ধু-১। স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণের কয়েকদিন আগে থেকেই একে নিয়ে আলোচনা ছিল মানুষের মুখে মুখে।

southeast

আলোচিত সমালোচিত মাদকবিরোধী অভিযান :

২০০৮ সাল থেকে মাদকের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স ঘোষণা করলেও বাংলাদেশের ইতিহাসে মাদকবিরোধী সর্ববৃহৎ অভিযানটি হয়েছিল চলতি বছরের মে মাসে। প্রথমে এক সংবাদ সম্মেলনে সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর ঘোষণা দেন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। ঘোষণা ছাড়াই পৃথকভাবে অভিযান শুরু করে পুলিশ। মাদক নির্মূলে ঘটে একের পর এক ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা। নিহতের সঠিক পরিসংখ্যান না দেয়া হলেও ছোট-বড় প্রায় ২০০ মাদকব্যবসায়ী মারা যায় অভিযানে। গ্রেফতার করা হয় প্রায় ৪০ হাজার জনকে।

তবে দেশের মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকার শীর্ষ স্থানে থাকা ইশতিয়াককে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

জনগণের সমর্থন নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাদকবিরোধী অভিযানটি পরিচালনা করলেও টেকনাফের পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকের নিহতের ঘটনা সমালোচিত করে অভিযানকে। একরামকে ‘ধরে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় হত্যার’ একটি অডিও রেকর্ড গণমাধ্যমে ফাঁস হলে অনেকেই বন্ধুকযুদ্ধ ও র‍্যাবের জবাবদিহিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তার নিহত হওয়ার অভিযানটি নিয়ে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে জোরেশোরে না থাকলেও এখনও বিচ্ছিন্নভাবে চলছে মাদকবিরোধী অভিযান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভোল্টের সোনায় নয়-ছয় :

হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে টাকা চুরির দুই বছর যেতে না যেতেই আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জুলাই মাসে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের উঠে আসে অদ্ভুত তথ্য। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়- ২০১৫ সালের ২৩ আগস্ট কাস্টম হাউসের গুদামে ১৯ দশমিক ২ ক্যারেট সোনার একটি চাকতি এবং একটি কালো প্রলেপযুক্ত সোনার রিং জমা ছিল। তবে দুই বছর পর চাকতিতে ১১ দশমিক ২ ক্যারেট সোনা ও আংটিতে ৩ দশমিক ৬৩ ক্যারেট পাওয়া যায়। সোনা হেরফেরের অভিযোগ তুলেছে তারা।

তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাফাই গেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় দাবি করেছে- ৪০ শতাংশ ও ৮০ শতাংশের সমস্যা হয়েছে, এটি ‘ক্লারিক্যাল এরর’। লেখার মধ্যে ইংরেজি বাংলা মিশ্রণ হয়ে গেছে। কিছু ব্যাপার আমরা করি, মান্ধাতা আমলের সোনা মাপার কষ্টিপাথর দিয়ে পরীক্ষা করা হয়, এখন সর্বশেষ কিছু সিস্টেম ইলেকট্রনিক যন্ত্রে সোনার ক্যারেট মাপা হয়। এর মধ্যে চুল পরিমাণ কিছু বেশকম হতে পারে। উভয় নির্বাহী কর্তৃপক্ষ আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, ভয়ের কিছু নেই।

এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি করা হলেও প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনো আপডেট গণমাধ্যমকে জানানো হয়নি।

কয়লা উধাও :

জুলাই মাসে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া খনির কোল ইয়ার্ড থেকে ১ লাখ ৪২ হাজার টন কয়লা উধাও হয়ে যায়। এসব কয়লার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। ১৬ হাজার টাকা দরের উধাও হওয়া এ কয়লার বাজার মূল্য ছিল ২২৭ কোটি টাকা। এ ঘটনায় বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয় কয়লা উত্তোলনের কাজও। কয়লা উধাওয়ের ঘটনা ফাঁস হলে দেশজুড়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শুরু হয় কঠোর সমালোচনা। এ ঘটনায় পেট্রোবাংলার পরিচালক (মাইন অপারেশন) কামরুজ্জামানকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

তদন্ত চলাকালে খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমদকে অপসারণ ও মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কোম্পানি সচিব) আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে বদলি করা হয়।

প্রাথমিক তদন্তের পর এ ঘটনায় ১৯ কর্মকর্তার নামে পার্বতীপুর থানায় মামলা হয়। ঘটনার কয়েকদিন পর এর তদন্ত শুরু করে দুদক। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় দায়িত্বরত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে।

দুই সহপাঠীর মৃত্যুতে দেশ কাঁপিয়েছে কলেজ শিক্ষার্থীরা :

২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাপায় দিয়া খানম মিম ও আবদুল করিম নামে দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় বদলে যায় বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট। ওই ঘটনার প্রতিবাদে সেদিন থেকেই শিক্ষার্থীরা রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা।

পরদিন আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ট্রাফিক শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করে শিক্ষার্থীরা। গাড়ি আটকে তাদের কাগজপত্র-লাইসেন্স যাচাই বাছাই করে। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে ভিআইপি-ভিভিআইপিদের গাড়ি, উল্টো পথ থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে বাণিজ্যমন্ত্রীর গাড়িও। তবে তৃতীয় দিনের আন্দোলনকে কলঙ্কিত করে বহিরাগত কিছু শিক্ষার্থীর পুলিশের ওপর হামলা চালায়। ধর্ষণ-চোখ উপড়ে ফেলার মতো গুজব ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষিপ্ত করে তোলার চেষ্টা করা হয়। গুজবে কান দিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডি, সাইন্সল্যাব, বসুন্ধরা ও রামপুরা এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও তাদের সহযোগী হেলমেটধারী যুবকদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৬৫ জনের মতো শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। ফেসবুক লাইভে গুজব ছড়ানো ও আন্দোলনে উসকানি দেয়ার ঘটনায় মডেল নওশাবা আহমেদসহ মোট চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর শান্ত হয় আন্দোলন।

তবে এই আন্দোলনের পর থেকে সড়কে কিছুটা হলেও শৃঙ্খলা ফিরেছে।

আলোচিত গ্রেনেড হামলার রায় ঘোষণা :

এ বছরের ১০ অক্টোবর বুধবার ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায় ঘোষণা করা হয়। ১৪ বছর আগের আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে নারকীয় ওই গ্রেনেড হামলার রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন সাজা দেয়া হয়। ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে।

২০০৪ সালের ২১ আগস্টের বাংলাদেশকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। আলোচিত এ মামলায় ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং ২০ জনের সাফাই সাক্ষ্য নেয়ার পর রায় ঘোষণা করা হয়।

অভিমানী অরিত্রির মৃত্যু, ভিকারুননিসায় লঙ্কাকাণ্ড :

ডিসেম্বরের ৩ তারিখ সোমবার। ভিকারুননিসার নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন নিয়ে আসায় হল থেকে বের করে দেয়া হয় অরিত্রি অধিকারীকে। আর কোনো পরীক্ষায় অংশ নিতে না দিয়ে তাকে টিসি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলে অরিত্রির বাবা-মাকে ডেকে তার সামনেই অপমান করা হয় তাদের। বাবা-মাকে ক্লাস টিচার, প্রভাতী শাখার প্রধান ও অধ্যক্ষের কাছে লাঞ্ছিত হতে দেখে দৌড়ে বাড়ি চলে যায় অরিত্রি। নিজের ঘরের ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে সে।

southeast

অরিত্রির মৃত্যুর পরপরই ভিকারুননিসার বাইরে অবস্থান নেয় তার সহপাঠীরা। তারা অভিযোগ করে, তুচ্ছ বিষয়ে এ ধরনের লাঞ্ছনা প্রতিদিনের ব্যাপার। তারা অধ্যক্ষসহ তিনজন শিক্ষক ও স্কুলের গভর্নিং বোর্ডের সদস্যদের পদত্যাগ দাবি করে। শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে ভিকারুননিসা স্কুল, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড পৃথক কমিটি করে। পল্টন থানায় ‘আত্মহত্যার প্ররোচনাকারী’ হিসেবে মামলা হয় তাদের বিরুদ্ধে। কমিটির প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে ভিকারুননিসার নানা দুর্নীতির তথ্য। উঠে আসে তিন শিক্ষকের অসৎ আচরণের তথ্য। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী স্কুলের অধ্যক্ষ নাজনিন ফেরদৌস, প্রভাতী শাখার প্রধান জিনাত আক্তার ও শ্রেণি শিক্ষিকা হাসনা হেনাকে বরখাস্ত করা হয়। শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে মামলার তদন্তভার মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশকে দেয়া হয়। শিক্ষক হাসনা হেনা আটক করে পাঠানো হয় কারাগারে।

তবে এ ঘটনার পরদিন শিক্ষিকার জামিনের দাবিতে বিক্ষোভ-অনশন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষিকা জামিনে মুক্ত হওয়ার পর কিছুটা শান্ত হয় ভিকারুননিসা। বছরের শেষ দিকে বেশ আলোচিত হয় ভিকারুননিসা শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন :

এ বছরের সব ঘটনাকে ছাপিয়ে গেছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ৩০ ডিসেম্বর। এই নির্বাচনে বিএনপি আসা না আসা নিয়ে ছিল শঙ্কা। তবে কয়েক দফা দৌড়ঝাঁপের পর সরকারকে সরাতে তৈরি হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নামে নতুন জোট। এই জোটে যোগ দেয় বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব গঠিত ঐক্যফ্রন্ট প্রথম থেকেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনার ও পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করে আসছে। নির্বাচনের ৪ দিন আগ পর্যন্ত একই অভিযোগ তাদের।

মহাজোট সরকারের সঙ্গে একাত্মতা থাকলে নির্বাচনে এবারের অন্যতম আকর্ষণ ছিল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে কয়েকবার তিনি নিজেই অ্যাম্বুলেন্স ডেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সর্বশেষ চিকিৎসা নিতে যান সিঙ্গাপুরে। সেখান থেকে ২৪ ডিসেম্বর দেশে ফেরার কথা থাকলেও ‘চিকিৎসা শেষ হয়নি’ বলে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ফেরেননি তিনি।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দুই দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যেই ছিল ক্ষোভ। দেশের বিভিন্ন স্থানে মনোনয়ন নিয়ে হয়েছে সহিংসতা। হামলার শিকার হয়েছেন ড. কামাল হোসেন, আ স ম আব্দুর রব, গয়েস্বর রায়, মির্জা আব্বাস দম্পতিসহ ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। নির্বাচনী হামলা থেকে বাদ যায়নি সাংবাদিকরাও। তবে সবকিছুর পরও ৩০ ডিসেম্বরের এই নির্বাচনের দিকেই তাকিয়ে সারাদেশ।

হিরো আলম ও মাশরাফির মনোনয়ন, সাকিবকে রেড সিগন্যাল :

পরিকল্পনা মন্ত্রী বছরখানেক আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তূজা ও সাকিব আল হাসানকে রাজনীতিতে আনার কথা। শেষমেশ তার কথাই সত্য হল। ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে দোয়া নিয়েছেন মাশরাফি। এরপর নড়াইল-২ আসন থেকে তোলেন মনোনয়ন ফর্ম। মাশরাফির রাজনীতিতে আসা ও বাংলাদেশ দলে খেলা নিয়ে সারাদেশে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনা। কেউ কেউ এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক চোখে দেখলেও অধিকাংশই খেলোয়াড় মাশরাফিকে রাজনীতিতে না আসার পরামর্শ দেন। মাশরাফির পাশাপাশি সাকিবও রাজনীতিতে আসার ইচ্ছা পোষণ করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী তাকে আপাতত ‘খেলায় মনোযোগ দেয়ার’ নির্দেশ দেন।

বছরের শেষ দিকে নির্বাচনের সব সংবাদকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের ভোটে অংশ নেয়ার বিষয়টি। প্রথমে জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করলেও তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রথম ধাপে ব্যার্থ হিরো আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন। তবে সমর্থকদের তথ্যে অসঙ্গতি থাকায় নির্বাচন বাতিল হয় হিরো আলমের মনোনয়নপত্র। রিটার্নিং কর্মকর্তা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল করলে শুনানির পর আবারও বাতিল হয় তার আবেদন। নির্বাচন করতে অবশেষে হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন হিরো আলম। পেয়ে যান কাঙ্ক্ষিত রায়। আদালত তাকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার অনুমতি দেয়, কমিশন থেকে পছন্দের সিংহ প্রতীকও পান হিরো আলম। নির্বাচনে অংশগ্রহণের গোটা প্রক্রিয়াজুড়ে দেশজুড়ে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় ক্ষেত্রে আলোচিত ছিলেন তিনি।

jagonews


আপনার এ্যাড দিন

ফটো গ্যালালি

Islamic Vedio

বিজ্ঞাপন ভিডিও এ্যাড




© All rights reserved © 2018 angina24.com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com